Header Ads

পৃথিবীর দ্রুততম ৫টি পাখি নাম এবং তাদের গতির পরিমাণ ।




আকাশে উড়তে পারে এমন প্রাণী

পেরেগ্রিন ফ্যালকন (Peregrine Falcon) – 389 km/h (Dive) 
 

পেরেগ্রিন ফ্যালকন (Peregrine Falcon) – বিশ্বের দ্রুততম পাখি 


সাধারণ তথ্য:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Falco peregrinus
  • বাংলা নাম: পেরেগ্রিন বাজ
  • পরিবার: ফ্যালকনিডি (Falconidae)
  • বাসস্থান: পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই পাওয়া যায় (অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া)। পাহাড়, পর্বত, উঁচু গাছ, এমনকি শহরের উঁচু বিল্ডিংও এদের আবাস হতে পারে।
  • গড় আয়ু: বন্য পরিবেশে ১৫-২০ বছর
  • আকার:
    • দৈর্ঘ্য: ৩৪–৫০ সেমি
    • ডানার বিস্তার: ৭৪–১২০ সেমি
    • ওজন: ৩৩০–১৫০০ গ্রাম (মহিলা পাখি পুরুষের তুলনায় বড় হয়)

গতি ও শিকার করার দক্ষতা:

  • সর্বোচ্চ গতি: ৩৮৯ কিমি/ঘণ্টা (২৪২ মাইল/ঘণ্টা) – যা পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীর মধ্যে সর্বোচ্চ।
  • সাধারণ উড়ার গতি: ৪০–৫৫ কিমি/ঘণ্টা।
  • শিকারের কৌশল: এই পাখি উঁচু স্থান থেকে দ্রুতবেগে নিচের দিকে ডাইভ (stoop) দিয়ে আকাশেই শিকারকে আঘাত করে, যা সাধারণত শিকারকে মুহূর্তেই অজ্ঞান বা হত্যা করে।

খাদ্য:

  • প্রধানত বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি আকারের পাখি খেয়ে থাকে (যেমন কবুতর, ঘুঘু, গানের পাখি, উপকূলীয় পাখি)।
  • মাঝে মাঝে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীও খেয়ে থাকে।

বিশেষত্ব:

  • এটি শুধুমাত্র দ্রুততম পাখিই নয়, বরং সমগ্র প্রাণীজগতের দ্রুততম প্রাণী।
  • আধুনিক শহরেও এটি ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং উঁচু বিল্ডিং থেকে শিকার করে।
  • বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে এই প্রজাতি ধীরে ধীরে সংরক্ষিত হচ্ছে, কারণ একসময় কীটনাশক (DDT) ব্যবহারের কারণে এদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।

সংক্ষেপে:

পেরেগ্রিন ফ্যালকন পৃথিবীর দ্রুততম প্রাণী, যার গতি ৩৮৯ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি মূলত অন্যান্য পাখিকে শিকার করে এবং উঁচু স্থান থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আক্রমণ চালায়।






গোল্ডেন ঈগল (Golden Eagle) – 320 km/h (Dive) 

গোল্ডেন ঈগল (Golden Eagle) – শক্তিশালী ও দ্রুততম ঈগল

সাধারণ তথ্য:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Aquila chrysaetos
  • বাংলা নাম: গোল্ডেন ঈগল (সোনালী ঈগল)
  • পরিবার: অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae)
  • বাসস্থান: উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার পাহাড়, তৃণভূমি ও বনাঞ্চল।
  • গড় আয়ু:
    • বন্য পরিবেশে ১৫-৩০ বছর
    • বন্দী অবস্থায় ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে
  • আকার:
    • দৈর্ঘ্য: ৬৬–১০২ সেমি
    • ডানার বিস্তার: ১৮০–২৩৪ সেমি
    • ওজন: ৩–৬.৩ কেজি (মহিলা ঈগল পুরুষের তুলনায় বড়)

গতি ও শিকার করার দক্ষতা:

  • সর্বোচ্চ গতি: ৩২০ কিমি/ঘণ্টা (Dive)
  • সাধারণ উড়ার গতি: ৪৫–৫৫ কিমি/ঘণ্টা
  • শিকারের কৌশল:
    • এরা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন পাখি, যা ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শিকার দেখতে পায়।
    • উচ্চ আকাশ থেকে ডাইভ দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী থাবার সাহায্যে শিকার ধরে ফেলে।
    • একা বা জোড়ায় শিকার করতে পারে।

খাদ্য:

  • প্রধানত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (যেমন খরগোশ, কাঠবিড়ালি, শিয়াল, ছোট হরিণ)।
  • মাঝে মাঝে সরীসৃপ, অন্যান্য পাখি, এমনকি মৃত প্রাণীও খেয়ে থাকে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় শিকার যেমন ভেড়া বা হরিণের বাচ্চা ধরার ক্ষমতাও রয়েছে।

বিশেষত্ব:

  • এটি ঈগল প্রজাতির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী শিকারি পাখি।
  • এদের দৃষ্টিশক্তি মানুষের তুলনায় ৪-৮ গুণ বেশি তীক্ষ্ণ।
  • এটি দ্রুততম ঈগলদের মধ্যে অন্যতম এবং দ্বিতীয় দ্রুততম পাখি (পেরেগ্রিন ফ্যালকনের পরেই)।
  • গোল্ডেন ঈগল বিভিন্ন সংস্কৃতিতে শক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সংক্ষেপে:

গোল্ডেন ঈগল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শিকারি পাখি, যা ৩২০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে ডাইভ দিতে পারে। এটি ক্ষিপ্রতা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও শক্তিশালী থাবার মাধ্যমে শিকার ধরে এবং সাধারণত পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় বসবাস করে।








সাদা-গলা সুইফট (White-throated Needletail Swift) – 169 km/h

সাদা-গলা সুইফট (White-throated Needletail) – বিশ্বের দ্রুততম প্রাকৃতিক ফ্লাইং পাখি

সাধারণ তথ্য: 

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Hirundapus caudacutus
  • বাংলা নাম: সাদা-গলা সুইফট
  • পরিবার: অ্যাপোডিডি (Apodidae)
  • বাসস্থান: এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, চীন, জাপান এবং ইউরোপের কিছু অংশে পাওয়া যায়।
  • গড় আয়ু: ১০–১৫ বছর
  • আকার:
    • দৈর্ঘ্য: ২০ সেমি
    • ডানার বিস্তার: ৫১-৫৭ সেমি
    • ওজন: ১১০-১২০ গ্রাম

গতি ও উড়ার দক্ষতা:

  • সর্বোচ্চ গতি: ১৬৯ কিমি/ঘণ্টা (সরাসরি উড়ার ক্ষেত্রে দ্রুততম পাখি)
  • উড়ার ধরন:
    • এরা অত্যন্ত দ্রুতগতির এবং প্রায় সারাজীবন আকাশেই কাটায়।
    • উড়ন্ত অবস্থায় ঘুমাতে ও বিশ্রাম নিতে পারে।
    • ডানা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সরু, যা দ্রুত গতি অর্জন করতে সাহায্য করে।

খাদ্য:

  • প্রধানত বাতাসে উড়ন্ত পোকামাকড়, যেমন মৌমাছি, প্রজাপতি, মাছি এবং উইপোকা খেয়ে থাকে।
  • শিকার করার সময় সাধারণত দ্রুতগতিতে উড়ে এবং একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে খাবার সংগ্রহ করে।

বিশেষত্ব:

  • এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রাকৃতিক ফ্লাইং পাখি (যা পেরেগ্রিন ফ্যালকনের চেয়ে দ্রুত, যদি ডাইভিং গতি বিবেচনা না করা হয়)।
  • বেশিরভাগ সময় উড়ন্ত অবস্থায় কাটায় এবং ভূমিতে নামার প্রয়োজন হয় না।
  • এটি গ্রীষ্মকালে উত্তরের ঠান্ডা অঞ্চল থেকে উষ্ণ অঞ্চলে অভিবাসন করে।

সংক্ষেপে:

সাদা-গলা সুইফট পৃথিবীর দ্রুততম প্রাকৃতিক ফ্লাইং পাখি, যা ১৬৯ কিমি/ঘণ্টা গতিতে উড়তে পারে। এটি সাধারণত উড়ন্ত পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে এবং অধিকাংশ সময় আকাশেই কাটায়।







গরুর বাজ (Gyrfalcon) – 130 km/h

গিরফ্যালকন (Gyrfalcon) – বিশ্বের বৃহত্তম ফ্যালকন

সাধারণ তথ্য: 

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Falco rusticolus
  • বাংলা নাম: গিরফ্যালকন
  • পরিবার: ফ্যালকনিডি (Falconidae)
  • বাসস্থান: প্রধানত আর্কটিক অঞ্চল – উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া, গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডের শীতল তুন্দ্রা অঞ্চলে পাওয়া যায়।
  • গড় আয়ু:
    • বন্য পরিবেশে ১৫-২০ বছর
    • বন্দী অবস্থায় ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে
  • আকার:
    • দৈর্ঘ্য: ৪৮–৬৫ সেমি
    • ডানার বিস্তার: ১১০–১৬০ সেমি
    • ওজন:
      • পুরুষ: ৮০০–১২০০ গ্রাম
      • স্ত্রী: ১২০০–২১০০ গ্রাম (স্ত্রী গিরফ্যালকন পুরুষের চেয়ে বড় হয়)

গতি ও শিকার করার দক্ষতা:

  • সর্বোচ্চ গতি: ১৩০ কিমি/ঘণ্টা (ডাইভিংয়ের সময়)
  • সাধারণ উড়ার গতি: ৮০–৯০ কিমি/ঘণ্টা
  • শিকারের কৌশল:
    • এরা মূলত শিকারের ওপর থেকে দ্রুতগতিতে আক্রমণ করে।
    • শিকার ধরার পর শক্তিশালী থাবা ও ঠোঁট দিয়ে দ্রুত হত্যা করে।
    • কখনও কখনও নিচু থেকে সরাসরি আক্রমণ করেও শিকার ধরতে পারে।

খাদ্য:

  • প্রধানত অন্যান্য পাখি (যেমন তিতির, হাঁস, কবুতর, শ্বেত-পাতিহাঁস, স্নো গুজ, ছোট বাজ)।
  • মাঝে মাঝে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (যেমন খরগোশ, কাঠবিড়ালি) শিকার করে।
  • প্রচণ্ড ঠান্ডার সময় খাদ্যের অভাব হলে মৃত প্রাণীও খেতে পারে।

বিশেষত্ব:

  • গিরফ্যালকন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী ফ্যালকন
  • এটি সাধারণত ধূসর, বাদামি এবং সাদা রঙের হয়। পুরোপুরি সাদা গিরফ্যালকন বিরল এবং অত্যন্ত মূল্যবান।
  • রাজকীয় শিকারি পাখি হিসেবে অতীতে বিভিন্ন রাজবংশ গিরফ্যালকনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিকার করত।
  • আর্কটিক অঞ্চলের কঠিন পরিবেশেও বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত।

সংক্ষেপে:

গিরফ্যালকন বিশ্বের বৃহত্তম এবং অন্যতম শক্তিশালী ফ্যালকন। এটি ১৩০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে ডাইভ দিতে পারে এবং প্রধানত শীতল তুন্দ্রা অঞ্চলে বাস করে। শক্তিশালী থাবা ও শিকারের দক্ষতার জন্য এটি প্রাচীনকাল থেকেই রাজকীয় শিকারি পাখি হিসেবে জনপ্রিয়।

স্পারোহক (Eurasian Hobby) – 160 km/h

ইউরেশিয়ান হবি (Eurasian Hobby) – ক্ষিপ্র ও চতুর শিকারি বাজ

সাধারণ তথ্য:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Falco subbuteo
  • বাংলা নাম: ইউরেশিয়ান হবি
  • পরিবার: ফ্যালকনিডি (Falconidae)
  • বাসস্থান: ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশ। এটি গ্রীষ্মকালে ইউরোপ ও এশিয়ায় থাকে এবং শীতকালে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় অভিবাসন করে।
  • গড় আয়ু: ১০–১৫ বছর
  • আকার:
    • দৈর্ঘ্য: ২৯–৩৬ সেমি
    • ডানার বিস্তার: ৭৪–৮৪ সেমি
    • ওজন:
      • পুরুষ: ১৩০–২২৫ গ্রাম
      • স্ত্রী: ১৪০–৩০০ গ্রাম (স্ত্রী বড় হয়)

গতি ও শিকার করার দক্ষতা:

  • সর্বোচ্চ গতি: ১৬০ কিমি/ঘণ্টা (ডাইভিংয়ের সময়)
  • সাধারণ উড়ার গতি: ৭০–৮০ কিমি/ঘণ্টা
  • শিকারের কৌশল:
    • ক্ষিপ্রগতিতে উড়তে ও বাঁক নিতে পারে, যা শিকারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
    • এটি সাধারণত শিকারকে আকাশে তাড়া করে এবং উড়ন্ত অবস্থায় শিকার ধরে ফেলে।
    • এরা দ্রুতগতির ছোট পাখি, পতঙ্গ এবং কখনও কখনও বাদুড়ও ধরে খায়।

খাদ্য:

  • মূলত অন্যান্য ছোট পাখি (যেমন গাংচিল, কাঠশালিক, গুবরে পাখি ইত্যাদি)।
  • বাতাসে উড়ন্ত পোকামাকড় (যেমন ড্রাগনফ্লাই, পোকার ঝাঁক)।
  • মাঝে মাঝে বাদুড়ও শিকার করতে পারে।

বিশেষত্ব:

  • এটি অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতির বাজ, যা আকাশে দ্রুত বাঁক নিতে পারে।
  • অন্যান্য ফ্যালকনের তুলনায় এটি অপেক্ষাকৃত ছোট এবং হালকা।
  • শিকারের সময় সাধারণত এটি পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে থাকে, যা সাধারণ বাজদের থেকে আলাদা।
  • ইউরোপে এই পাখিকে প্রশিক্ষিত শিকারি পাখি হিসেবে ব্যবহারের ঐতিহ্য রয়েছে।

সংক্ষেপে:

ইউরেশিয়ান হবি একটি ছোট, দ্রুতগতির বাজ, যা ১৬০ কিমি/ঘণ্টা বেগে উড়তে পারে। এটি মূলত ছোট পাখি ও পোকামাকড় শিকার করে এবং শিকার ধরার দক্ষতার জন্য পরিচিত।








কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.